গাইবান্ধায় মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল নারী উদ্যোক্তা সুলতানা

গাইবান্ধায় মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল নারী উদ্যোক্তা সুলতানা

গাইবান্ধা সদরের কুপতলা ইউনিয়নের
তালুকদার বাড়ীর সুলতানা তানজিমা ফেরদৌসী একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।গড়ে তোলেন “সুলতানা এগ্রো” নামে কৃষি প্রজেক্ট।তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি অফিসার।
স্বামীসহ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের  চাকরি করতেন।
কিন্তু ছোট থেকে তার শখ ছিল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার।
তাইতো এক সময় চাকরি ছেড়ে বিভিন্ন কৃষি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে
কৃষি কাজে দৃঢ়ভাবে মনোনিবেশ করেন। সারা বছরে কয়েক লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি করেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম এনে দিয়েছে সুলতানার সাফল্য। এই সাফল্য আজ কৃষিক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।সুলতানা চার বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি বছর টমেটো, বেগুন, মরিচ, শসা, তরমুজ,কুমড়া, ফিলিপাইন ব্লাক আখ, করলা এবং রকমেলন সহ বিভিন্ন সবজির ফলন।

পরিবেশ বান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহার করেছেন জমিতে। তিনি স্বল্প সময়ে খাদ্যগুন সমৃদ্ধ উচ্চমূল্যের সবজি  চাষে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন। পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি অতি দ্রুততার সঙ্গে উচ্চমানের ফলন পান। সারা বছর সবজি বিক্রি করছেন। এ পদ্ধিতে সবজি চাষ করে ভালো দাম পেয়ে আসছেন।মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে তার খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে বিক্রি হবে আনুমানিক ৫-৬ লাখ টাকা। বর্তমানে তার এখানে ৫-৬ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে কৃষক সুলতানা বলেন, ‘সাধারণভাবে সবজি চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় না। নানা ভাবে গাছ নষ্ট হয়েছে যায়। তবে মালচিং পেপার ব্যবহারে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এ পদ্ধিতিটি গাছকে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও অতি বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। সারের অপচয় রোধ করে। আগাছা দমন করে এবং মাটির আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলন ভালো পাওয়া যায়।তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সহযোগিতা পেলে কৃষিতে আরও সাফল্য পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।’

ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফসল ক্ষেতের পানি সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রুত উড়ে যায় না। ফলে জমিতে রসের ঘাটতি হয় না এবং সেচ লাগে অনেক কম। মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ২৫ ভাগ আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও মালচিং ব্যবহারের ফলে জমিতে আগাছা হয় না এবং পোকামাকড়ও কম হয়। এক বিঘা জমিতে আট থেকে সাড়ে আট হাজার টাকার মালচিং লাগেএকটা ফসলে তিন থেকে চার বার নিড়ানি দিতে হয় সেখানে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করলে নিড়ানি খরচ লাগে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘মালচিং পেপার ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এটি গাছের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং ফলন বাড়ায়। ফলে কৃষক লাভবান হয়।’

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহারের ফলে সবজি চাষে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে।বাজারে সবজির ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার অনেক খুশি। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ওই সফলতা কৃষিক্ষেত্রে নতুন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কৃষক সুলতানার সাফল্য অন্যান্য কৃষকদেরও প্রেরণা দিচ্ছে। এ পদ্ধতি পুরো জেলার কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে সবজি উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। গাইবান্ধায় বর্তমানে যে সবজি উৎপাদন হচ্ছে, তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।’

জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশ (নাসিব) গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি ইঞ্জি মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন,
‘সুলতানা নাসিব কার্যালয় থেকে উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ উদ্যোগে কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে সফলতা পাচ্ছেন।
তার এ কাজ অব্যাহত থাকলে একজন আদর্শ কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পাবেন। যারা কৃষি সহ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক তাদেরকে প্রশিক্ষণ, সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হবে।’

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *