গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
৩০ বছর বয়সী দিশা আকতার তমা। একসময় স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে চলছিল জীবিকার লড়াই। এর মধ্যে দৃঢ় মনোবলে শুরু করেন কৃষি ফসল উৎপাদনের কাজ। কৃষিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে এখন সাফল্যের শিকড়ে পৌঁছেছেন এই উদ্যোমী নারী তমা।
সম্প্রতি গাইবান্ধা সদর উপজেলার দক্ষিণ ফলিয়া নামক এলাকার কৃষি মাঠে দেখা গেছে- ফুলকপি, শিম, বেগুন ,লাউ, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া,আদাসহ বিভিন্ন সবজি মাঠের অপরূপ দৃশ্য। সেখানে পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন তমা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিশা আকতার তমা অসচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করে বিয়েও হয় অসচ্ছল পরিবারেই। পরিবারে রোজগারের লোক না থাকায় স্বামীর বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি। তার মা হাসনা হেনা বেগম একা হওয়ায় দায়িত্বভার পড়ে নিজ কাঁধেই। সেই থেকেই স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে দুই সন্তান নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন এই নারী। তারপর নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই কৃষি কাজ থেকে কোনো কিছু করা যায় কি না সেই ভাবনা তার। নিজের ইচ্ছের কথাটা তুলে ধরেন স্বামী শরিফুল ইসলামের কাছে। আর নিজের জমিতে শুরু করেন বিভিন্ন প্রকারের সবজির আবাদ। তার মধ্যে মিষ্টি কুমড়া, শিম, ফুলকপি, লাউ, টমেটো ও আদা। প্রথম অবস্থায় সবজি খাত থেকে সফলতা পান তমা। একইসঙ্গে গাভীর খামারের পরিকল্পনা করছেন এই নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে ৪ বিঘা শতাংশ জমিতে চলছে সবজির আবাদ। আর পতিত জমিতে ১২০০ বস্তা আদা চাষ করেছেন।
তার মামা নাসিব গাইবান্ধা জেলা সহ-সভাপতি জানে আলম সোহেল বলেন,
তার ভাগনী দিশা অনেক পরিশ্রম করে সফলতার মুখ দেখেছেন। এলাকায় উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় আশপাশে সবাই উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানে সবজি ফসলি জমি বাড়ছে। সরকারি উদ্যোক্তা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসলে দিশার পক্ষে আরো ভালো কিছু করা সম্ভব।

নারী উদ্যোক্তা দিশা আক্তার তমা বলেন,
এক সময় অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা ছিল। এখন ফসল উৎপাদন করে অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছি। দূর হয়েছে অভাব নামের শব্দটি। আগামীতে আরো বেশি জমিতে সবজি চাষ করে বীজ উৎপাদন করবো। যাতে করে আমার গাইবান্ধার কৃষক ভাইদের বাহির থেকে বীজ কিনতে না হয় ।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি,বাংলাদেশ (নাসিব) গাইবান্ধা জেলা সভাপতি মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন,
নাসিব কৃষি উদ্যোক্তা দিশা গাইবান্ধার কৃষি উদ্যোক্তাদের রোল মডেল। ওনার দেখাদেখি আশপাশের কয়েকজন নারী কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে।
আমরা আমাদের সাধ্যমত ওনার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
উনি সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ পেলে আরো ভালো কিছু করবেন।
জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতা পেলে উনি আরো একধাপ এগিয়ে যাবেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, দিশা আকতার তমা সাহস ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাকে আরও লাভবান করতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো ।



