সাদুল্লাপুর প্রতিনিধি :
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ঐতিহ্যবাহী কল্যাণপুর বারুণীর মেলা (স্নান উৎসব) ঘিরে শুরু হয়েছে নানা ধরণের জুয়া আসর। পাশাপাশি চলছে মাদক সেবনসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড। ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি স্পর্টে জুয়ার আসর বসানোর একাধিক ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও এসব জুয়া বন্ধে এলাকাবাসী জোর দাবি জানালেও শুধু লোক দেখানো অভিযানে সীমাবদ্ধ পুলিশ। ফলে এলাকার অভিভাবক ও সচেতন মহলসহ জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।
আগামীকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুরে সনাতন ধর্মালম্বীদের অস্টমীর স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসবকে ঘিরে ওই এলাকায় অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী বারুণীর মেলা। পাশেই ঘাঘট নদীতে হবে স্নানোৎসবের সকল প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
কিন্তু মেলাকে ঘিরে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দিনভর আশেপাশের একাধিক স্থানে শুরু হয়েছে জুয়া খেলা। সরেজমিনে মেলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেলার পাশে গাছ বাগান ও ঘাঘট নদী তীরের ফাঁকা জমিতে ত্রিপল বিছিয়ে জুয়ার আসর বসিয়েছেন এলাকার চিহ্নিত জুয়ারিরা। সেখানে চলছে ছয়গুটির ফরডাবু, ঘির্ণি ও তিন তাসসহ নানা ধরণের জুয়া খেলা। আর জুয়া খেলায় মেতে উঠেছেন কিশোর-যুবক ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের মানুষ। ইতোমধ্যে জুয়া খেলে টাকা পয়সা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, থানা ও ডিবি পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে জুয়ার আয়োজন করেছে চিহ্নিত জুয়ারি চক্র। এ কারণে পুলিশ ও প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ করা হলেও তারা জুয়া বন্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। এতে করে বারুনীর মেলার স্নান উৎসবের পবিত্রতা নষ্ট হওয়াসহ এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির আশংখা দেখা দিয়েছে।
তবে জুয়ার আসরের সাথে সম্পৃক্ত নাম প্রকাশে একাধিক ব্যক্তি জানান, জুয়ার আসর বসানোর জন্য প্রথমত ভাড়া হিসেবে জমি মালিকদের টাকা দিতে হয়েছে। তাছাড়া মোটা অংকের টাকায় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও থানা ও ডিবি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করেই জুয়া আসর বসানো হয়েছে।
এলাকাবাসী বলছেন, প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী এই বারুনীর মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীদের সমাগম ঘটে। মেলায় দেশীয় বিভিন্ন কারুপণ্য, মাটির তৈরি জিনিসপত্র, গৃহস্থালিসামগ্রী, শিশুদের খেলনা, বিভিন্ন ধরনের খাবার, কাপড়, শাকসবজি, মাছ ও ফলের দোকান বসে। মেলায় হিন্দুু সম্প্রদায় ছাড়াও হাজার-হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
কল্যাণপুর মেলার এলাকার বাসিন্দা গনেশ চন্দ্র সরকার জানান, প্রায় দেড় শতাধিক বছর থেকে এই এলাকায় সনাতন ধর্মালম্বীদের অস্টমীর স্নান ও বারুণীর মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু কিছু দূর্বৃত্ত ও সুযোগ সন্ধানী লোকজন এই মেলার আশোপশে নানা ধরণের জুয়া খেলার আসর বসানোয় অস্টমীর স্নান উৎসবের পবিত্রতা নষ্ট হয়ে পড়ছে।
একই এলাকার আনিছুর রহমান জানান, বিগত কয়েক বছর পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতায় মেলায় জুয়া খেলা হয় নাই। কিন্তু এবার মেলার একদিন আগ থেকেই শুরু হয়েছে জমজমাট জুয়া খেলা। জুয়া খেলে অনেকে টাকা-পয়সা হারাচ্ছেন। এতে করে এলাকায় অপরাধ প্রবণতা ও চুরি-ছিনতাই বৃদ্ধি পাবার আশংখা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহিদ হাসান শুভ জানান, মেলায় জুয়া খেলা চলতে দেওয়া হবেনা। আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। এছাদা পরিষদের গ্রামপুলিশ দিয়ে মেলা এলাকায় জুয়া খেলা বন্ধে সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে।
পুলিশ ম্যানেজ হবার বিষয়টি অস্বীকার করে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তাজ উদ্দিন খন্দকার বলেন, জুয়া খেলার অভিযোগে ইতিমধ্যে এক একজনকে আটক করা হয়েছে। মেলা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ জুয়া খেলা বন্ধে একাধিক পুলিশ সদস্য মাঠে কাজ করছে।
এদিকে, মেলা ঘিরে জমজমাট জুয়ার আসর বসায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা বাড়ছে অভিভাবক ও সচেতন মহলের মধ্যে। তারা বললছেন, মেলায় নির্বিঘ্নে জুয়া খেলতে আগে থেকে চিহ্নিত জুয়ারু চক্রের সদস্যরা কতিপয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যস্থতায় পুলিশসহ বিভিন্ন জনকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে। জুয়া খেলার পাশাপাশি চলছে মাদকসেবনসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ড। জুয়ার আসরকে ঘিরে মেলা ও আশপাশের এলাকা এখন অপরাধিদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এতে করে যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কাজী মো. মোহাম্মদ অনিক ইসলাম বলেন, মেলা ঘিরে কোথাও জুয়া খেলার সুযোগ নেই। মেলা এলাকায় পুলিশ টহল জোরদার করাসহ দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



