সেই ২০১০ সালের দিকে আড়াই বিঘা জমিতে শুধু গোলাপের চাষ করেছিলেন মলয়। করোনা কালে ফুল বিক্রি না হওয়ায় মাথায় যেন বাজ পড়েছিল কৃষক মলয়ের। ক্ষতি এড়াতে পরে বন্ধুর পরামর্শে ঊনিশ সালে লাগিয়েছিলেন শতাধিক চায়না ও দার্জিলিং কমলার চারা। সেই কমলায় বাজিমাত করেছেন তিনি। ফলিয়েছেন ৩০ মনের বেশি মিষ্টি কমলা। ফ্রি খাইয়েছেন দর্শনার্থীদের আর বিক্রিও করেছেন আড়াই লাখ টাকা।
সফল ওই কৃষকের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম পূর্ব ছাপড়হাটিতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দক্ষিণ পাশে সারি সারি লাগানো গাছে পাকা টসটসে কমলা ঝুলছে। সেই কমলা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ছোট-বড় অনেকেই। দেখছেন বাগান ঘুরে ঘুরে। কেউ বা ফ্রি টেস্ট করছেন, আবার কেউ বা দুইশ টাকা কেজি দরে কিনছেন ওই কমলা।
দর্শনার্থীরা বলছেন, তারা আগে কমলা খেয়েছেন বটে। কিন্তু একেবারে নাকের ডগায় এভাবে চায়না ও দার্জিলিং কমলার চাষ কখনো দেখেননি তারা। তার ওপর মানও খানিকটা ভালো হওয়ায় বিমোহিত দর্শনার্থীরা।
স্থানীয় অধিবাসী মিজানুর রহমান ভূইয়া বলেন, মলয়ের কমলা ও ফুলের বাগান দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলে-মেয়েরা আসে। মলয়ের মতো আরো অনেকেই যদি এমন বাগান করে, তবে এলাকার মানুষ অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
ছায়ায়ও ফলনে ঘাটতি হয় না বলে ওই কমলা গাছের নিচে দুই হাজার ব্যাগে মলয় চাষ করেছেন আদা। ফুল ও ফলের জমিতে সমন্বিত আদার ফলনও যে বাম্পার হতে পারে সেটাই ঘুরে দেখা যায় মলয়ের বাগানে। মলয়ের আশা ফলন হতে পানে কমপক্ষে ২ হাজার কেজি। এতে হাতে আসবে তার অন্তত ২ লাখ টাকা।
পশ্চিম ধারে গোলাপের বাগানে ফোটে হরেক রঙের দেশি, বিদেশি ও হাইব্রিড গোলাপ। সে গোলাপ যায় শহরের বিভিন্ন ফুলের দোকানে। আর এই গোলাপ বিক্রিতেই মলয়ের আসে অন্তত দেড় লাখ টাকা।
করোনা কালে গোলাপ চাষে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যশোরের এক বন্ধুর পরামর্শে কলমার বাগান করেছেন বলে জানিয়েছেন সফল কৃষক মলয় কুমার লিটন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে শতাধিক চারা লাগিয়েছি। ২০২১ সালে দুই একটি গাছে ৪-৫ টি কমলা ধরেছিল। রঙও তখন ভালো হয়নি। তবে ২০২৩ সালে ১০-১২ মন কমলা ধরেছিল। রঙও ছিল দারুণ! কিন্তু বিক্রি করিনি। সবাইকে দিয়েছি। এবার অন্তত ৩০ মন কমলা ধরেছে। দর্শনার্থীরাও খাচ্ছে। আবার তারাই প্রতি কেজি কমলা ২০০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশিদুল কবির বলেন, ভালো ফলন পেতে কমলা চাষি মলয়কে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।



